মালনিছড়া চা বাগান (Malnicherra Tea Estate)
সিলেটের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া চা বাগান। সিলেট শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে অথবা মনের ভেতরে চা বাগানের ছবি ভেসে উঠে । ছোটবেলায় বই পুস্তকে চা বাগানের ছবি আর চা শ্রমিকের জীবন যাত্রা নিয়ে যা পড়েছি তাতেই চা বাগান ঘুরে দেখার একটা গভীর আগ্রহ প্রায় সবার মনেই জাগে ।
মালনিছড়া বাংলাদেশে প্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান।সিলেট অঞ্চলের চা বাগানগুলো মূলত টিলা কেন্দ্রিক । ছোট ছোট টিলার গা বেয়ে গড়ে উঠেছে চা বাগান । সিলেট শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তর দিকে মালনিছড়া টি এস্টেটের অবস্থান।সিলেটের উপজেলা কোম্পানিগঞ্জ যাওয়ার সড়কে দু ধারের কিছু অঞ্চল নিয়ে মালনিছড়া।অত্যন্ত মনোরম আর নিরিবিলি এই চা বাগানটি ভ্রমনের জন্য খুবই জনপ্রিয়।
ব্রিটিশদের শাসনামলে ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মালনিছড়া চা বাগান।ইংরেজ সাহেব হার্ডসন ও তাঁর ভাই এই বাগান টি তৈরি করেন।পাকিস্তান আমলে বিখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানি “ডানকান ব্রাদার্স” এই বাগান পরিচালনা করত। বর্তমানে “মালনিছড়া টি এস্টেট” এর স্বত্বাধিকারী সিলেটের স্বনামধন্য শিল্পপতি রাগিব আলী।মূলত রাগিব আলীই এই বাগানটিকে আরও সুন্দর এবং উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।বর্তমানে এই বাগানটিকে সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক বাগান বলা হয়।
প্রায় ১৫০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মালনিছড়া চা বাগান ঘুরে দেখার জন্য সারা বছর জুরেই পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।বাগানে প্রবেশের জন্য কোন টাকার প্রয়োজন হয়না।আনুষ্ঠানিক অনুমতিও নিতে হয়না।প্রবেশ পথে গার্ডদেরকে বলেই ভেতরে যাওয়া যায় । সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে একজন চা শ্রমিক পুরো চা বাগানে গাইড হিসেবে থাকবে ।
মালনিছড়ায় প্রবেশ করেই অনেকটা পাহাড়ি উঁচু পথ বেয়ে উপড়ে উঠতে হবে, একটু সামনেই ম্যানেজারের বাংলো । সেটিও টিলার উপরে । চারিদিকে শুধুই সবুজ চা গাছ আর টিলার ধাপে ধাপে ছায়াবৃক্ষ। টিলার গোঁড়ায় সরু পথ, এই পথ দিয়ে হেঁটে যেতেই দেখা হয়ে যাবে চা কন্যাদের সাথে, ঠিক চা পাতা সংগ্রহের যে ছবি আমরা পাঠ্যপুস্তকের পাতায় দেখেছি । মন ফিরে যাবে শৈশবে । উঁচু নিচু পথ চলতে সহজেই ক্লান্তি চলে আসে, তাই দ্রুত না হেঁটে একটি নির্দিষ্ট গতিতে হাঁটলে ক্লান্তি বোধ কমে যায়। নিরব নিস্তব্ধ পরিবেশে মাঝে মাঝেই পাখির ডাক কানে আসবে । মালনিছড়া চা বাগানের গভীরে কমলালেবু আর রাবার বাগানও রয়েছে । এগুলোও চা গাছের মত পাহাড়ের গাঁয়ে লাগানো । চা বাগান পরিচালনায় বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন। নিরাপত্তার খাতিরেই পর্যটকরা বাগানের বেশী ভেতরে প্রবেশ করেন না।চা বাগানের সৌন্দর্য জোছনা রাতে একেবারেই অন্যরকম । যদিও রাতে চা বাগানে থাকা নিষেধ তথাপিও অনুমতি নিয়ে অনেকেই পূর্ণিমায় জোসনা বিহারের আয়োজন করেন ।
মালনিছড়া চা বাগানের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো প্রবহমান পানির ধারা রয়েছে, এগুলকে ছড়া বলে । বর্ষাকালে সবগুলো ছড়াতেই পানি প্রবাহিত হয় । ছড়ার পানি জাফলং এর পিয়াইন নদীর পানির মতই স্বচ্ছ আর ঠাণ্ডা । ছড়ার পানিতে খালি পায়ে নামলে আর উঠতে মন চায়না । পানির শীতল পরশে অনেকক্ষণ হাঁটতে ইচ্ছে করবে । সিলেটে এখন প্রচুর পর্যটক অবস্থান করছেন , ক্লান্তিময় জীবনের একঘেয়েমি কমাতে ঘুরে আসুন সিলেট থেকে । নিজেকে নতুন করে ফিরে পেতে প্রকৃতির মাঝে খুঁজে পাবেন ভিন্ন স্বাদ । সিলেটে যারা বেড়াতে আসেন, হাতে দুই এক ঘন্টা সময় থাকলে এখানে বেরিয়ে যেতে পারেন । আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে আসতে দশ মিনিট সময় লাগবে । পাবলিক সিএনজিতে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫ টাকা, আর রিক্সায় ১০-১২ টাকা ।(সংগৃহীত)