৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি সিলেট জেলার ,সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নে জহিরিয়া এম.ইউ.নিম্ন মাধ্যমিক(বর্তমানে উচ্চ বিদ্যালয়) বিদ্যালয় ছাড়া আর কোন মাধ্যমিক বা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না ।ফলে এ এলাকার শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর জহিরিয়া এম.ইউ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে সিলেট শহরের কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হত।
বিদ্যাশিক্ষার প্রতিকুল পরিবেশে অত্র এলাকার মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ প্রায় ছিল না বললেই চলে।এমতাবস্থায় তৎকালীন অনেক সমাজ হিতৈষী, শিক্ষানুরাগী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের চিন্তা ভাবনা করেন । এদের মধ্যে কৃষ্ণ গোবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক জনাব আপ্তাব উদ্দিন আহমদ, তদানিন্তন ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব শওকত আলী,জনাব তরিক উদ্দিন(ঈদন মিয়া) , শ্রী গোপেন্দ্র কুমার ঘোষ , জনাব এম আর জায়গীরদার, জনাব খন্দকার ফজলুর রহমান, জনাব আরজু মিয়া,জনাব সিদ্দেক আলী, জনাব তারা মিয়া গং শিক্ষাদরদী ব্যক্তিদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৬৭ খ্রিঃ কৃষ্ণ গোবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই প্রথম ৬ষ্ঠ শ্রেণি খোলা হয় ।
জনাব আপ্তাব উদ্দিন আহমদ প্রথমে তাঁর সহকর্মীদের দ্বারাই এ শ্রেণির লেখা পড়ার কাজ চালাতেন । তৎকালীন থানা শিক্ষা অফিসার জনাব ফয়েজ আহমদ চৌধুরী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করে সর্বসম্মতভাবে বিদ্যালয়ের নামকরণ করেন হযরত শাহ পরাণ (রঃ) জুনিয়র হাই স্কুল । ১৯৬৮ সনে প্রধান শিক্ষক হিসাবে শ্রীহরিপদ ধর বাবুকে এবং সহকারি শিক্ষক হিসাবে মোঃ তালিব উদ্দিনকে নিয়োগ করা হয় । বিদ্যালয়ের গৃহ নির্মানের জন্য ভূমির প্রয়োজনে তৎকালীন ইউ পি সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য শ্রী গোপেন্দ্র কুমার ঘোষ বাবুর সহায়তায় অত্র এলাকার জন দরদী ব্যক্তি শ্রী নব কুমার দে বিদ্যালয়ের নামে ০.৫৭ শতক ভূমি দান করেন । তাঁদের দানকৃত এ ভূমির উপর এলকার সুহৃদ ব্যক্তিবর্গের আর্থিক সহায়তায় বিদ্যালয়ের সর্ব প্রথম গৃহ নির্মান করে জুনিয়র বিদ্যালয়ের শ্রেণি শিক্ষা কর্যক্রম চলতে থাকে । বিদ্যালয়গৃহ নির্মান করতে তৎকালীন বিদ্যালয় কমিটির সেক্রেটারী মরহুম জনাব শওকত আলী সাহেবের ত্যাগ অনস্বীকার্য। অত্র এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি শ্রী গজেন্দ্র চক্রবর্তী বিদ্যালয়ে কিছু জমি দান করেন যা পরবর্তীতে বিক্রি করে বিদ্যালয় গৃহ নির্মান কাজে ব্যয় করা হয় । বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের অন্যতম সদস্য মরহুম জনাব আরজু মিয়া বিদ্যালয়ের সাহায্যার্থে বাজারে বাজারে চাঁদা তুলে বিদ্যালয়ের আসবাব পত্র তৈরী করেছেন ।
১৯৬৯ সালে বিদ্যালয়টিতে ৮ম শ্রেণি খোলা হয় । বিদ্যালয়টির সরকারি অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে । জুনিয়র স্কুল হিসাবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য একজন স্নাতক পাশ প্রধান শিক্ষকের শর্ত থাকায় এবং শ্রী হরিপদ ধর স্নাতক পাশ না থাকায় ০১/০১/১৯৬৯ খ্রিঃ হতে শ্রী ভানু কুমার চন্দ কে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় । পরবর্তীতে
০১/০১/১৯৭০ খ্রিঃ হতে জনাব মাসুক আহমদ কে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় । ০৮/০৯/১৯৬৮ খ্রিঃ ম্যানেজিং কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তৎকালীন জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী জনাব আজমল আলী চৌধুরী সাহেব কে দিয়ে জুনিয়র স্কুল উদ্বোধন করা হয় । বাহুবল নিবাসী শ্রী সার নায়ের মৃত্যুর পরে তাঁর কোন উত্তরাধিকারী না থাকায় সম্পত্তির মালিক হন তাঁর স্ত্রী শ্রী ময়না বালা দেবী । শ্রী ময়না বালা দেবীর বসত বাড়ি (বর্ত- মান বিদ্যালয়স্থ ভূমি) জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক জোর দখলের মাধ্যমে বেহাত হওয়ায় শ্রী ময়না বালা দেবী কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে বাহুবল নিবাসী শ্রী সুরেন্দ্র নাথ ( মরহুম মসা নাথ) কে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন ই্উ পি চেয়ারম্যান মরহুম শওকত আলী সাহেবের বাড়ি যান । তাঁর সৎ পরামর্শ অনুযায়ী ৩.৩৪ একর জমি হযরত শাহ পরাণ (রঃ) জুনিয়র হাই স্কুলের নামে দান করেন। শ্রী ময়না বালা দেবীর দানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে আজীবন দাতা সদস্য হিসাবে মর্যাদা দান করা হয় । মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ম্যানেজিং কমিটির আজীবন দাতা সদস্য ছিলেন ।
১৯৭০ সালে বিদ্যালয়টি জুনিয়র হাই স্কুল হিসাবে রেজিস্ট্রেশন লাভ করে । বিদ্যালয়টিতে ১৯৭১ সালে ৯ম শ্রেণি এবং ১৯৭২ সালে ১০ম শ্রেণি খোলা হয় । পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্তমান বিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন অত্র ইউনিয়নের সর্ব প্রথম চেয়ারম্যান মরহুম জনাব সিকন্দর আলী চৌধুরী । ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। এ প্রতিষ্ঠান হতে ঐ বৎসরই সর্ব প্রথম এস এস সি পরীক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। বিদ্যালয়টিতে ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ এবং ১৯৯৬ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ খোলা হয় ।
২০১০ সনে জনাব মাসুক আহমদ অবসর গ্রহণ করার পর তাঁর স্থলে নিয়াগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব খছরুজ্জামান তাপাদার ২৫.০৫.২০১০ খ্রিঃ যোগদান করেন । প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্ন থেকে এখানকার শিক্ষার্থীরা দুর-দুরান্তে গিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করত ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হত। প্রতিষ্ঠানটিকে এস এস সি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে দেখতে চেয়েছিল যা এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও ম্যানেজিং কমিটির সার্বিক সহযোগিতায় ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বপ্রথম পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে জে.এস.সি ও এস.এস.সি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়াও প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের বিচক্ষণ চিন্তার ফসল হিসাবে ঐ বৎসরই শিক্ষা মন্ত্রনালয় হতে ০৪ (চার) টি অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা খোলার অনুমতি লাভ করে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত শ্রেণি শাখার বাইরেও অতিরিক্ত ০৮ (আট) টি শ্রেণি শাখা রয়েছে । ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সিলেট জেলার একটি বৃহত প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে ।
প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৪টি দ্বিতল ভবন ও ১টি একতলা ভবন রয়েছে । বর্তমানে অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২,৫৬৭ জন। ২০ জন এম.পি.ও ভূক্ত এবং ১৪ জন খন্ডকালীন শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করতেছেন । প্রতিষ্ঠানটির পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক ।