গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ
Gausia Committee Bangladesh
============================
একটি সমাজ সংস্কার মূলক অরাজনৈতিক আন্দোলন। সমাজ সংস্কারের পূর্বশর্ত হলো ব্যক্তি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ; অর্থাৎ যারা এই সমাজ সংস্কারে নেতৃত্ব দেবে প্রথমে তাদের আত্মশুদ্ধি নিশ্চিতকরণ। এজন্যে গাউসিয়া কমিটির পরিকল্পনা হলো- ১. গাউসুল আ’যম জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র সিল্সিলাহর কামিল প্রতিনিধির হাতে বায়’আত ও সবক গ্রহণের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির এ পাঠশালায় অন্তর্ভুক্তকরণ। ২. গাউসিয়া কমিটির সদস্য বানিয়ে তাদেরকে এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া, যাতে তারা ধীরে ধীরে আমিত্ব, হিংসা বিদ্বেষ, লোভ-লালসা ও অহঙ্কারমুক্ত পরিচ্ছন্ন মানুষ হিসেবে পরিণত হয়। ৩. সুন্নীয়তের আক্বীদা এবং ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির সাথে সাথে উভয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় মৌলিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নেতৃত্বের উপযোগী কর্মি হিসেবে গড়ে তোলা। ৪. সুন্নীয়ত ও ত্বরীকতের দায়িত্ব পালনে, বিশেষতঃ মাদরাসা, আনজুমান এবং মুর্শিদে বরহক্বের নির্দেশের প্রতি আস্থাশীল এবং মুর্শিদের বাতলানো পথে নিবেদিত হয়ে নবী প্রেমিক এবং খোদাপ্রাপ্তির পথ সুগম করার অনুশীলনে নিরলসভাবে এগিয়ে চলার শপথ গ্রহণ করা।
উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে গড়ে উঠা গাউসিয়াতের কর্মী বাহিনীর হাতে এ সমাজের পরিশুদ্ধির দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে সমাজ সংস্কারের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাওয়া। কারণ বর্তমানে এ সমাজ, রাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্বে অশান্তির পেছনে যে কারণটি প্রধান তা তাহলো অযোগ্য, অশুদ্ধ, লোভী, হিংসুক, অহংকারী এবং দাম্ভিক ব্যক্তিদের নেতৃত্বে সমাজ রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়া। বদ-আক্বীদা এবং ক্বোরআন সুন্নাহ বিরোধী শিক্ষা ও চেতনাসম্পন্ন নেতারা সমাজকে ধীরে ধীরে জাহেলিয়াতের দিকেই নিয়ে গিয়েছে। তাই জাহেলিয়াত দূর করে আবারো ইসলামের দিকে এ সমাজকে যারা নিয়ে আসবে, আগে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে আলোকিত মানুষ হিসেবে। এ আলোকিত নেতাদের বাতি থেকে হাজার হাজার বাতি প্রজ্জ্বলিত হয়ে সমস্ত অন্ধকার দূর হবে। তাই, গাউসিয়া কমিটির পরিকল্পনা হলো প্রথমে পরিশুদ্ধ নেতা সৃষ্টি করা এবং পরে তাদের দিয়ে সমাজ শুদ্ধি করণ নিশ্চিত করা।
সিলসিলাহ্র মাশায়েখ হযরাত প্রদত্ত ফজর, মাগরিব এবং এশা নামাজান্তে পঠিতব্য সবক জিকির, দরূদ ও সালাতে আওয়াবীন আদায় করা হয় নিজের আত্মার উন্নয়নের জন্য, আর গাউসিয়া কমিটির কর্মসূচি বাস্তবায়নের সবক ও নির্দেশ হলো সমাজের বহুমুখী উন্নয়নে। হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটী তাঁর পীর খাজা চৌহরভীর খিদমতে খোদা তালাশের জন্য পাহাড়ে জঙ্গলে ইবাদতে মশগুল হবার অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু পান নি; বরং পীর সাহেব ক্বেবলা বলেছিলেন, একা একা খোদা তালাশের চেয়ে সমাজের অন্যান্য মানুষকে পথ দেখানোর কাজে নিয়োজিত থাকা অনেক উত্তম। সাথে সাথে নির্দেশ দেওয়া হলো রেঙ্গুনে গিয়ে মানব সেবা ও দ্বীনি সংস্কারে নেতৃত্ব দিতে। সে নির্দেশ তিনি ১৯২০ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত রেঙ্গুন ও বাংলাদেশে যথাযথভাবে পালন করেছেন। আর সেই একই মিশনের এক একজন কর্মী হবার সৌভাগ্য অর্জিত হয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র সদস্যদের। সুতরাং বুঝতে হবে যে, গাউসে পাক শায়খ আবদুল ক্বাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তাজ্ঞআলা আনহু যেভাবে দ্বীনের পুনর্জীবনের জন্য শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ হিসেবে এসেছিলেন ঠিক তেমনি তাঁর এ মিশনের যুগশ্রেষ্ঠ খলীফা শাহানশাহে সিরিকোটী এবং গাউসে যামান তৈয়্যব শাহঞ্চর আগমনও হয়েছে দ্বীনি সংস্কারের মাধ্যমে এ সমাজ শুদ্ধি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে। গাউসিয়া কমিটির সদস্যগণ হলেন এ আন্দোলনের এক এক পর্যায়ের এক এক জন নিবেদিত প্রাণ সৈনিক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর বন্ধু আউলিয়ায়ে কেরাম সম্পর্কে বলেছেন,
‘আলা— ইন্না আউলিয়া-অৎল্লাহি লা-খাওফুন আলাইহিম ওয়ালা-হুম ইয়াহযানূ-ন, আল্লাযী-না আ-মানূ ওয়া কা-নূ ইয়াত্তাক্বূন, লাহুমুল বুশরা- ফিল হায়া-তিদ্ দুনিয়া ওয়া ফিল আ-খিরাহ্।
অর্থাৎ জেনে রাখ! নিশ্চয়ই ওলীগণের কোন ভয় নেই এবং দুঃখও নেই। যাঁরা ঈমান এনেছে এবং পরহেযগারী অবলম্বন করেছে, তাদের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে রয়েছে সুসংবাদ. [আল-ক্বোরআন]
যাদের ঈমান আক্বীদা এবং আমলী যিন্দেগী পরিশুদ্ধ ও উত্তম তাঁরাই আল্লাহর বন্ধু তাঁদের দুনিয়া এবং আখিরাতে রয়েছে অভয়, সুখ আর সুসংবাদ।
গাউসিয়া কমিটি এমন একদল মানুষই সৃষ্টি করতে চায়- যারা ঈমান আক্বীদা, তাক্বওয়া অর্জন এবং প্রতিষ্ঠায় অপ্রকাশ্য শত্রু নাফ্সে আম্মারার এবং সামাজিক শত্রু বাতিল সম্প্রদায়ের সাথে যুগপৎ জেহাদে নিয়োজিত সাহসী সৈনিক হিসেবে কাজ করবে। তারা একদিকে ক্বাদেরিয়া ত্বরিকাভুক্ত এবং অন্যদিকে গাউসিয়াতের সামাজিক আন্দোলনের কর্মী হবার কারণে স্বয়ং গাউসুল আ’যম দস্তগীরের পক্ষ থেকেও অভয় বাণী ও সুসংসাদ পেয়েছেন। গাউসে পাক তাঁর এমন মুরীদদের উদ্দেশ্যে বার বার বলেছেন-মুরীদি লা-তাখাফ’ অর্থাৎ জ্ঞহে আমার মুরীদ! ভয় করো না’। একদিকে আল্লাহর অভয় বাণী, অন্যদিকে এই মিশনের মহান ইমাম গাউসুল আ’যমের জ্ঞঅভয়বাণী’ সংগঠনের কর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্যে এনেছে বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। এ জোয়ারই একদিন সব বাতিলের ভিত ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। কারণ, আল্লাহপাক ঘোষণা করেন-
ওয়াকূল জা—-আল হাক্ব্ক্বু ওয়া যাহাক্বাল বাতিল, ইন্নাল বা-ত্বিলা কা-না যাহূ-ক্বা [বলুন! সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, নিশ্চয়ই মিথ্যা অপসৃত হবারই। [আল-ক্বোরআন]
সত্যের নিশান হাতে এ ক্বাফেলার সফলতা অব্যাহত থাকবে-ইন্শাআল্লাহু তাআলা। শাহানশাহে সিরিকোট ও হুযূর ক্বেবলা তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিও এ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। তা থাকবেও না কেন? এ কাফেলা তো ‘গাউসুল আ’যম’-এর কাফেলা। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নির্বাচিত উজির হিসেবে খোলাফা-ই রাশেদীন, হযরত হাসানাঈন-ই করীমাঈন, হযরত হাসান আসকারী হয়ে হুযূর গাউসুল আ’যম জীলানী দস্তগীর হয়ে ইমাম মাহদীর শুভাগমন পর্যন্ত বরং ক্বিয়ামত পর্যন্ত ‘গাউসিয়াত-ই কুব্রার ছায়া ধারাবাহিকভাবে একটি সত্যের কাফেলার উপর থাকবেই। সিহা সিত্তার হাদীস শরীফের ঘোষণানুসারে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ওই সত্যপন্থী কাফেলা (জমা‘আত)ই সব সময় বিজয়ী থাকবে। [ইবনে মাজাহ শরীফ]
এটা ওই গাউসে আ’যম দস্তগীর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর কাফেলা, যাঁর গর্দান শরীফ আল্লাহর সমস্ত ওলীর গর্দানের উপর, যাঁর পৃষ্ঠ মুবারক হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর রফরফ শরীফ। সুতরাং গাউসিয়া কমিটি যেন ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হয়ে একদিন ইমাম মাহদী আলায়হিস্ সালাম-এর ফৌজ হিসেবে দ্বীন ও মাযহাব প্রতিষ্ঠা করবে, নিরাপদ থাকবে দাজ্জালসহ সব ধরনের ফিৎনা থেকে। বর্তমানে তো ‘গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’ নামের এ সংগঠনটির প্রত্য পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন গাউসে পাকের দু’জন সুযোগ্য নায়েব আমাদের হুযূর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ সাহেব ও হুযূর ক্বেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবের শাহ্ সাহেব ক্বেবলা।
সুতরাং আসুন, গাউসিয়া কমিটির সদস্য হোন! কমিটির বরকতময় কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করুন! এর মাধ্যমে জামেয়া, আঞ্জুমান, অগণিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনার নিরেট দ্বীনী কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে উভয় জাহানের কামিয়াবী হাসিল করুন!
হুযূর কেবলা তাহের শাহ’র আধ্যাত্মিক প্রেরণা এবং পীর সাবের শাহ্’র মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নেতৃত্বে এ কাফেলা এগিয়ে চলছে দেশ থেকে দেশান্তরে কাল থেকে কালানান্তরে। তারা নির্ভয়ে এগিয়ে চলবে সকল বাধা বিপত্তি উপো করে, কারণ খোদ্ গাউসুল আ’যম জীলানী তাদের অভয় দিয়েছেন, ‘হে আমার মুরীদ ভয় করো না!’