পৃথিবীর প্রাচীন স্মৃতিবিজড়িত নগর ঢাকা, সেই ঢাকার ঐতিহ্যমন্ডিত গৌরবোজ্জল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী আরমানিটোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। ঢাকার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার জন্য ১৯০৪ সন হতে স্কুলের যাত্রা শুরু। এই স্কুলটি ১৯০৪ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রাকটিসিং হাই স্কুল আরমানিটোলা নামে। সে কারণে শুরু থেকে ছিল এটি একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ইংরেজ আমলে আরমানিটোলা স্কুল স্বল্প সংখ্যক স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় ছিল। আরমেনিয়ানদের স্মৃতিবিজড়িত আরমানিটোলা স্কুল কয়েক একর জমির উপর মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে বৃটিশ স্থাপত্য শিল্প সমৃদ্ধ লাল ইটের গাঁথা বিশাল দেবদারু গাছ ঘেরা এবং মুসলিম স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন ঐতিহাসিক তারা মসজিদ সংলগ্ন। আরমানিটোলা অষ্টাদশ ও উনবিনশ শতাব্দীতে আরমেনীয় ব্যবসায়ী তাদের আবাস ও গির্জা, ব্রাক্ষন সমাজ ও ব্রাক্ষন মন্দির এবং তদানীন্তন পূর্ব বাংলার বিখ্যাত কয়েকটি মুসলিম ও হিন্দু জমিদার বাড়ীর অবস্থানের কারণে ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বা অভিজাত এলাকা ছিল। তাই সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিটি কলেজ এবং পরবর্তিতে গভর্নমেন্ট প্রাকটিসিং হাই স্কুল আরমানিটোলা স্কুল ইংরেজি ১৯০৭ খৃষ্টাব্দে নামকরণ করা হয় আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
আরমানিটোলা স্কুল ইংরেজি আমলে ছিল বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছাত্রদের মিলনস্থান। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে যখন ঢাকা প্রায়ই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষত-বিক্ষত ঢাকার বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আবাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল তখন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্যেও বিভিন্ন স্কুল অলিখিত ভাবে নির্দিষ্ট হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আরমানিটোলা স্কুল ছিল ব্যতিক্রম। ঘোর সাম্প্রদায়িকতার দিনেও আরমানিটোলা স্কুলে মুসলমান ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। স্মরণীয় যে আরমানিটোলা স্কুলের সম্মুখের প্রবেশ পথটি ছিল মুসলমান শিক্ষক-ছাত্রের জন্য আর পিছনের পথটি ছিল হিন্দু শিক্ষক-ছাত্রের জন্যে। ফলে শহরে দাঙ্গা-হাঙ্গামা চললেও ঐ পড়াশুনার বিরতি হতো না। এটাই ছিল এই স্কুলের ঐতিহ্য।