মোঘল শাসন থেকে বৃটিশ শাসন, পাকিস্তানী শাসন থেকে বাংলাদেশ- সকল ইতিহাস মিশে আছে আমাদের এই মাটিতে। প্রিয় মাটিতে এখনো আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সুঘ্রাণ। আমঝুপি নীলকুঠি, ভাটপাড়া নীলকুঠি এখনো বুকে ধারণ করে আছে বৃটিশ শাসনের শেষ চিহ্ন। ছেউড়িয়ার বুকে শায়িত মরমী সাধক লালন ফকির। শিলাইদহ দাঁড়িয়ে আছে আপ্লুত রবীন্দ্র-কাব্য হয়ে। লাহিনীপাড়ায় মীর মশাররফ হোসেনের অন্তিম নিবাস। মুজিবনগর আম্রকানন দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতার অভ্রান্ত ইতিহাস হয়ে। একাত্তরে এই মাটিই হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী। যুগে যুগে এই মাটি পরিচয় পেয়ে এসেছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে।
আমাদের ইতিহাস গর্বিত যুগান্তরের কথা বলে। কখনো নদীয়া, কখনো কুষ্টিয়া নামে রচিত সেই গর্বিত ইতিহাস। কালের বিবর্তনে পাল্টেছে মানচিত্র। নদীয়া ভেঙে জন্ম নিয়েছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া ভেঙে মেহেরপুর। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী ও ক্ষুদ্রতম জেলা মেহেরপুরের একটি উপজেলার নাম গাংনী- যা যুগে যুগে শুধু গর্বিত ইতিহাসেরই অংশীদার হয়েছে, বাস্তব উন্নয়নের অংশীদার হতে পারে নি কখনো।
এই মাটির প্রতি মমতা, মাটির মানুষের প্রতি ভালবাসা থেকে অনেকের মনেই স্বপ্ন জাগে মাটি ও মানুষের জন্য কিছু করার। অজস্র বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন বিচ্ছিন্নই থেকে যায়। গাংনী উপজেলার একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী একত্রিত করতে পেরেছে তাদের বিচ্ছিন্ন স্বপ্নগুলোকে। তাদের সমন্বিত স্বপ্ন থেকে আসে পরিকল্পনা। শিক্ষা-নির্ভর সেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ২০১৩ সালের ৭ জুন জন্ম নেয় একটি ছাত্র কল্যাণমূলক সংগঠন। নাম- STUDENTS’ WELFARE ASSOCIATION (SWA).
‘শিক্ষা ও ঐক্যে আনি আঞ্চলিক মুক্তি’ স্লোগান নিয়ে পথচলা শুরু হয় এই সংগঠনের। পথচলার প্রথম বছরেই শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অত্র এলাকার গুণীজন ও শিক্ষানুরাগী মানুষের অনুপ্রেরণায় সংগঠনটিকে নতুন করে ভাবতে হয় কার্যক্রমের পরিধি নিয়ে। সংগঠনটি সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষার পাশাপাশি সরাসরি সমাজকল্যাণে অংশগ্রহণের। কার্যক্রমের পরিসীমা পরিবর্ধনের ফলে সংগঠনের নতুন নামকরণের প্রয়োজন অনুভূত হয়। ২০১৪ সালের ২ জুলাই সংগঠনটির নতুন নামকরণ করা হয়। ‘প্রস্ফুটন শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ সংঘ’ নামে শুরু হয় অভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে আরো প্রসারিত পথচলা।
অরাজনৈতিক, অলাভজনক, বেসরকারী আঞ্চলিক সমাজসেবামূলক এই সংগঠনটি স্বপ্ন দেখে একটি সচেতন আলোকিত সমাজ গঠনের। শিক্ষাগত ও সামাজিক কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে গাংনী উপজেলার পিছিয়ে পড়া জনপদের মেধা, মনন ও সম্ভাবনার যথাযথ প্রস্ফুটন এবং অত্র এলাকাকে একটি প্রগতিশীল এবং আদর্শ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সংগঠনটি বদ্ধপরিকর।